সঞ্চয়পত্র নির্ভরতা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছে সরকার। উচ্চ সুদের বোঝা কমাতে আগামী বছর আরও সুদহার কমানোর পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারের এ উদ্যোগকে ইতিবাচক বলছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো, তবে বিনিয়োগকারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট।উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাস্তবতায় অনেক পরিবার টিকে আছে সঞ্চয়পত্রের আয়ের ওপর। কেউ কেউ বলছেন, ব্যাংকের অনিশ্চয়তা থাকলেও সঞ্চয়পত্র সরকারি হওয়ায় কিছুটা ভরসা ছিল। এখন সেটিও সংকুচিত হলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বহু মানুষ।
বাজেট ঘাটতি পূরণ ও উন্নয়ন খাতে অর্থায়নের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সরকার নির্ভর করে আসছে সঞ্চয়পত্র বিক্রির ওপর। তবে এই মাধ্যমটি ধীরে ধীরে নিরুৎসাহিত করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ সুদহার কমিয়ে ১১.৯৮ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৯.৭২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘মানুষ যেন ট্রেজারি বন্ড বা বিলে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকে, সে দিকেই সরকার ভাবছে এবং সে অনুযায়ী কাজও করছে।’এদিকে উচ্চ সুদে নেওয়া সরকারের ঋণের চাপ কমাতে সুদহার কমানোর পক্ষে মত দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও। অগ্রণী ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, ‘যেহেতু এখন মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে নেমেছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানো উচিত। তা না হলে সরকার ঋণ পরিশোধে হিমশিম খাবে।’
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিনিয়োগে মন্দাভাব, কর্মসংস্থানের অভাব ও আয় কমে যাওয়ার এই সময় সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর জন্য বিকল্প নিরাপদ বিনিয়োগ ব্যবস্থা তৈরি করা জরুরি।বিআইবিএম-এর সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘যারা দীর্ঘদিন সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করতেন, তাদের বলা উচিত—বিকল্প বিনিয়োগ উৎসের কথাও ভাবতে হবে। কারণ সঞ্চয়পত্রে এককভাবে ভরসা করাটা এখন আর বাস্তবসম্মত নয়।’ তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও প্রশ্ন তুলছে। গত অর্থবছরের হিসাব বলছে, সঞ্চয়পত্রে নিট বিক্রি হয়েছে ঋণাত্মক—প্রায় ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, সরকারের যতো টাকা বিক্রি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি টাকা খরচ হয়েছে পূর্ববর্তী সঞ্চয়পত্রের সুদ ও আসল পরিশোধে।