সামনে উপজেলা নির্বাচন। রাজধানীর অদূরে সাভার উপজেলার মূল সংসদীয় আসন ঢাকা-১৯। এ ছাড়া ঢাকা-২ ও ঢাকা-১৪ আসনে রয়েছে চারটি ইউনিয়ন। তিনজন সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি রয়েছেন ১২ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও একজন পৌর মেয়র। তবে তাদের সবাইকে ছাপিয়ে সাভারজুড়ে একচ্ছত্র আধিপত্য আপন দুই ভাই রাজীব ও সমরের। একজন সাভার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, আরেকজন তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর। দুজনই নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এক দশক ধরে তারা হয়ে উঠেছেন সাভার এলাকার নিয়ন্ত্রক। গত এক দশকে রাজীব ও সমর ছিলেন ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমানের ঘনিষ্ঠ। তাকে কেন্দ্র করেই গড়ে তুলেছেন নিজেদের বলয়। সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে মালিক বনে গেছেন অঢেল সম্পদের।
অন্যদিকে সাবেক সংসদ সদস্য মুরাদ জংয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ রাজীব ও সমরের। জাতীয় নির্বাচনে মুরাদ জংকে ঠেকানোই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। এ কারণেই নানা হিসাবনিকাশ করে ডা. এনামের পরিবর্তে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুলের পক্ষ নেন দুই ভাই। এতে ভরাডুবি হয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা. এনামুর রহমানের।
দলীয় স্বার্থ উপেক্ষা করে ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষায় সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিকে সাজানো হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, আবার তারই আপন ছোট ভাই ও তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমরকে করা হয়েছে একই কমিটির ২নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। রাজীব পরিবারের ঘনিষ্ঠ সাভার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত হোসেনকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়াও কমিটির সহসভাপতি রেহেনা রহমানের পরিবারেরই ৬ জন রয়েছেন এ কমিটিতে। ।’
রাজীব-সমরের মামা নজরুল ইসলাম মানিক মোল্লাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাভার পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বানানো হয়েছে। তিনি পৌরসভার প্যানেল মেয়র। আগামীতে মেয়র পদে নির্বাচন করতে চান বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন। রাজীবের শ্যালক সাভার সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম রুবেল।
সাভারের এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দুবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ফখরুল আলম সমর। জমি দখলে তার রয়েছে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। নিজেকে আড়ালে রাখতে বিভিন্ন সময়ে অসুস্থতা দেখিয়ে শ্যামপুরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কাজলকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়ে নানা অপকর্ম করান সমর। ইউপি নির্বাচনে সমরের বিরুদ্ধে যারাই প্রার্থী হন, তাদের পড়তে হয় নানা হুমকির মুখে। রাজীব-সমর দুই ভাই উপস্থিত বিভিন্ন সময়ে ওই প্রার্থীদের বাড়ি গিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকিসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন।
রাজীবের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচারের কথা ভাবতে পর্যন্ত পারেন না স্থানীয় সাংবাদিকরা। ২০২২ সালের মে মাসে তিন সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দেন রাজীব। তারা হলেন যুগান্তরের সাভার প্রতিনিধি মতিউর রহমান ভান্ডারী, এনটিভির সাভার বিশেষ প্রতিনিধি জাহিদুর রহমান ও বাংলা ট্রিবিউনের সাভার প্রতিনিধি নাদিম হোসেন। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদে বসে প্রকাশ্যে যুগান্তরের সাংবাদিকের হাতুড়িপেটা করার হুমকি দেন রাজীব। গত বছরের জানুয়ারিতে একাত্তর টেলিভিশনের সাভার প্রতিনিধি আশরাফ সিজেলের ওপর হামলা ও তাকে অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে রাজীবের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় রাজীবসহ চারজনের নামে থানায় অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক। এ ছাড়া সংবাদ প্রকাশের জেরে উপজেলা চত্বরে সোহেল রানা নামে দৈনিক দ্বিতীয়বার পত্রিকার এক সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর করেছে রাজীব বাহিনী। সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনায় থানায় মামলা—এমনকি বিভিন্ন সময় মানববন্ধন করেও কোনো প্রতিকার মেলে না। সাংবাদিকদের দাওয়াত দিয়ে এনে পেটানোর অভিযোগ রয়েছে রাজীবের ভাই সমরের বিরুদ্ধে।