রতন কান্তি দে উখিয়া (কক্সবাজার) :
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণে কক্সবাজার জেলাকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করে শহরের শহীদ দৌলত ময়দানে প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী
রণাঙ্গনের সাহসী বীর সৈনিক মুক্তিযুদ্ধকালীন কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) আব্দুস সোবহানকে রাষ্ট্রীয় গার্ড অফ অনার প্রদানের পর চির নিন্দ্রায় শায়িত করা হয়।
শনিবার (১৩ জানুয়ারী) বিকাল ৩ টায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত জানাযার নামাজের পূর্বে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান গার্ড অফ অনার প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানবির হোসেন ও উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.শামীম হোসেনসহ চৌকস টিম।
এরপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, প্রশাসনিক ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের পক্ষ থেকে গার্ড অফ অনার প্রদান করা হয়। এরপর জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানকে গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করে চির বিদায় জানানো হয়। জানাযার পূর্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আব্দুস ছোবাহানকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে স্মৃতিচারণমুলক বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ শাহজাহান চৌধুরী,
সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহীনুল হক মার্শাল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী, নুরুল আবছার, জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল, উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী, রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, রত্নাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার পরিমল বড়ুয়া,মধুসূদন
দে,তার ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবুল কাশেম, হলদিয়ার সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমিনুল হক আমিনসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ।
এর পূর্বে মরহুমের কফিনে জাতীয় পতাকা মুড়িয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান
উপজেলা প্রশাসন, থানা প্রশাসন,উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিল, কক্সবাজার জেলা ও উখিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উখিয়া উপজেলাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন।
স্মৃতিচারণের সময় মুক্তিযোদ্ধারা বলেন মুক্তিযুদ্ধে ১ নম্বর সেক্টরের অধীনে আব্দুস সোবহান কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার সাব সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন। কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে তাঁর নেতৃত্ব পরিচালিত মুক্তিযোদ্ধাদের দলটি বীরত্বপূর্ণ সফলতাও পান। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য স্বাধীনতা লাভের পর সরকার তাঁকে সেনাবাহিনীর সম্মানসূচক ‘ক্যাপ্টেন’ পদমর্যাদার স্বীকৃতি দেন।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর আব্দুস সোবহানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল জিপগাড়ী নিয়ে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে কক্সবাজার শহরে প্রবেশ করে। ওইদিন বিকালে ঐতিহাসিক কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরী ও ইন্সটিটিউটের শহীদ দৌলত ময়দানে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে কক্সবাজারকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন তিনি।দীর্ঘ নয়মাস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তার নেতৃত্বে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর ও রাজাকারদের ঘাঁটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের বেশকয়েকটি সশস্ত্র দল আক্রমণ চালায়। এত সফলতা অর্জন করে এসব ঘাটি দখলে
নেয়।
দেশ স্বাধীনের পর সেনাবাহিনীত থেকে অবসর জীবনে এসে নিজ জন্মভূমি উখিয়ায় এসে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। প্রতিষ্ঠা করেন মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,কেজি স্কুল মসজিদ মাদ্রাসাসহ
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এলাকার সার্বিক উন্নয়নে তার ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।
তার জানাযায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে,শেষবারের মতো মানুষের দোয়া ও ভালবাসায় সিক্ত হয়ে অন্তিম যাত্রায় চির বিদায় নিলেন ক্যাপ্টেন আব্দুস সোবহান। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টায় কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা হলদিয়াপালং ইউনিয়নের পশ্চিম মরিচ্যার নিজ বাসভবনে তিনি পাড়ি জমান না ফেরার দেশে।