গত বছরের ৩০ মে যশোর কোতয়ালী মডেল থানাধীন পুরাতন কসবা নিরিবিলি পাড়ায় ভবন নির্মানের জন্য খোড়ার সময় পরিত্যাক্ত পুরাতন টয়লেটের রিং স্লাবের কুয়ার মধ্যে একটি নীল রঙ্গের প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে মানুষের হাড়গোড় ও মাথার খুলি পাওয়া যায়। উক্ত ঘটনায় পিবিআই যশোর জেলা ছায়া তদন্ত অব্যহত রাখে। ছায়া তদন্তকালীন সময়ে জানা যায়, রাজীব হোসেন কাজী (৩২), পিং-মোঃ ফারুক হোসেন, সাং-চন্দোলি মহল, থানা-দিঘলিয়া, জেলা-খুলনা তার চাচা হাসমতের বাসায় থেকে জনৈক শেখ সজিবুর রহমান (৩৪), পিতা-শেখ আজিজুল হক, পুরাতন কসবা আবু তালেব সড়ক যশোর সদর যশোর এর বাসায় ও অফিসে কাজ করত। গত ২৯ মাচ ২০১৬ রাতে রাজিব তার পিতাকে ফোন করে তাদের খুলনার বাড়িতে আসছে বলে জানায়। কিন্তু রাজীব খুলনায় তাদের বাড়ীতে যায়নি। রাজীব বাড়ীতে না গেলে তার পিতা রাজীবের মোবাইল ফোনে কল করে মোবাইল ফোন বন্ধ পেলে ফারুক হোসেন তার ভাই হাসমত এর সাথে যোগাযোগ করে। হাসমত জানায় গত ২৯ মার্চ ২০১৬ থেকে রাজীবকে তারাও পাচ্ছেনা। কয়েকদিন পর রাজিবের মা মাবিয়া বেগম রাজীব এর খোঁজে যশোরে আসে। রাজিবে মা মাবিয়া বেগম ও চাচা হাসমত সজীবের বাসায় গিয়ে রাজিবের খোঁজ করলে সজীব জানায় রাজিব কোথায় গেছে সে তা জানে না। সে আরও বলে তারা যেন মামলা মোকদ্দমা করে ছেলেকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করে। রাজিবে মা ও চাচা রাজিবকে যশোর শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাজীবকে খোঁজ খবর করতে থাকে। সজীবের অফিস এবং বাড়ীতে ও সম্ভব্য সকল জায়গায় খুঁজাখুঁজি করে কোন সন্ধান না পেয়ে তারা নিরুপায় হয়ে পড়ে। রাজিবের মা নিরুপায় হয়ে বাড়ীতে ফিরে যায়। রাজীবের পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ফকির কবিরাজ এর কাছে যায়। কবিরাজ তাদেরকে জানায় রাজীব বেঁচে আছে সে ফিরে আসবে অপেক্ষা করতে হবে। রাজীব ফিরে আসবে ভেবে তারা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে। মাঝেমধ্যে কবিরাজের কাছে গেলে সে তাদেরকে আশ্বাস দেয় রাজীব বেঁচে আছে এবং সে ফিরে আসবে।
দীর্ঘদিন পর গত গত বছরের ৩০ মে রাজীবের চাচা হাসমত রাজীবের পিতা ফারুক হোসেনকে ফোন করে জানাই, যশোর কোতয়ালী মডেল থানাধীন পুরাতন কসবা নিরিবিলি পাড়াস্থ জনৈক মোঃ বজলুর রহমান, পিতা-মৃত আকবর আলীর বাউন্ডারী দেয়া ঘেরা জায়গায় ভবন নির্মানের জন্য খোড়ার সময় পরিত্যাক্ত পুরাতন টয়লেটের রিং স্লাবের কুয়ার মধ্যে একটি নিল রঙ্গের প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে মানুষের হাড়গোড় ও মাথার খুলি পাওয়া গেছে। আরো জানাই রাজীব যেখানে কাজ করত সেখানের টয়লেটের রিং স্লাবের ভিতরে ড্রামটি মাটি চাপা দেওয়া ছিল অর্থাৎ শেখ সজীবুর রহমান, পিতা-শেখ আজিজুল হক, পুরাতন কসবা আবু তালেব সড়ক যশোর সদর যশোর এর যেখানে অফিস ছিল সেখান হতেই মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গেছে। রাজীব নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন পর সজীব তার অফিস ভেঙ্গে ফেলেছিল। ফারুক হোসেন তার ভাই হাসমত এর উক্তরূপ কথা শুনে যশোরে আসে।
পিবিআইয়ের ছায়া তদন্তকালীন সময়ে মোঃ ফারুক হোসেন পিবিআই যশোর অফিসে এসে পুলিশ সুপার মহোদয়েকে তার ছেলেকে সনাক্তকরণের জন্য অনুরোধ করে এবং এই সংক্রান্তে পিবিআই যশোর কার্যালয়ে একটি জিডি করা হয়। যার জিডি নং-১৪৬, তাং ১২/০৯/২০২২ খ্রিঃ। উক্ত জিডির সূত্র ধরে পিবিআই যশোর জেলার এসআই(নিঃ) মোঃ জিয়াউর রহমান মোঃ ফারুক হোসেন এবং তার স্ত্রী মাবিয়া বেগমকে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশ গ্রহণ করে কঙ্কালের সাথে তাদের পরিচয় সনাক্তের নিমিত্তে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সিআইডি, মালিবাগ, ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষায় ড্রামের মধ্যে পাওয়া মানবদেহের কঙ্কালের সাথে মোঃ ফারুক হোসেন ও তার স্ত্রী মাবিয়ার ডিএনএর মিল পাওয়া যায়। অর্থাৎ ড্রামের ভিতরে পাওয়া কঙ্কাল বাদীর ছেলের তা ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়। ড্রামের মধ্যে পাওয়া কঙ্কালের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ইহা হত্যাকান্ড বলে প্রতীয়মান হয়। তখন পিবিআই, যশোর কর্তৃক ভিকটিম রাজীবের পিতা মোঃ ফারুক হোসেনকে সংবাদ দিলে তিনি যশোরে এসে যশোর কোতয়ালী থানায় তার ছেলের হত্যাকান্ড সংক্রান্তে অভিযোগ দায়ের করলে কোতয়ালী মডেল থানার মামলা নং-৩৪, তারিখ-১৭/০১/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।
উক্ত মামলাটি পিবিআই, যশোর জেলা স্বউদ্যোগে গ্রহণ করে মামলার তদন্তভার এসআই (নিঃ) মোঃ জিয়াউর রহমান এর উপর অর্পণ করা হয়। মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে পিবিআই প্রধান, অ্যাডিশনাল আইজি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্ববধান ও দিক নির্দেশনায়, পিবিআই যশোর জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন, পিপিএম-সেবা এর নেতৃত্ত্বে পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ শামীম মুসা, সঙ্গীয় এসআই (নিঃ) স্নেহাশিস দাশ, এসআই(নিঃ) মোঃ জিয়াউর রহমান, এসআই(নিঃ) ডিএম নূর জামাল সহ যশোর জেলার চৌকস দল কর্তৃক গত পরশু ঘটনার সহিত জড়িত আসামী মোঃ সালাম(৫৫), পিতা-মৃত নুর মিয়া, সাং-মঙ্গলহাটা, থানা-লোহাগড়া, জেলা-নড়াইল, বর্তমান সাং-কিসমত নওয়াপাড়া, জনৈক আবদার ড্রাইভার এর ভাড়াটিয়া, থানা-কোতয়ালী, জেলা-যশোরকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আন্যান্য অসামীরা ভিকটিম রাজীবকে হত্যা করে আসামী সালামের সহযোগীতায় মৃতদেহ গোপন করার জন্য ড্রামে ভরে তার ব্যবহৃত রিক্সায় করে পুরাতন কসবা নিরিবিলি পাড়া শেখ সজিবুর রহমান এর অফিসের টয়লেটের কুয়ার মধ্যে ফেলে দেয়। আসামী সালামকে গতকাল পলাশ কুমার দালাল, বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, যশোর আদালতে সোপর্দ করা হলে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। মৃতদেহ বহনের কাজে ব্যবহৃত রিক্সা জব্দ করা হয়েছে। হত্যাকান্ডে জড়িত অন্যান্য অসামীদের গ্রেফতার অভিযানসহ মামলার তদন্ত অব্যহত রয়েছে।