বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের সাম্প্রতিক অপপ্রচার এবং নাক গলানোর নিন্দা জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। একইসঙ্গে সব ধরনের উস্কানি ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার করেছে তারা। চলমান বিভিন্ন ইস্যুতে বুধবার (০৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিএনপি, জামায়াতসহ দেশের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া এ বৈঠক চলে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। দীর্ঘ এ বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ঐক্যবদ্ধ থাকার এ অঙ্গীকার করেন।
রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যের বিষয়ে বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের যে অর্থনৈতিক নিপীড়ন, সাংস্কৃতিক আধিপত্য, অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলানোর চেষ্টা, এসবের নিন্দা জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে ভারতকে বাংলাদেশের প্রতি মর্যাদাশীল এবং সৎ-প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
যেকোনো মূল্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার অঙ্গীকার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশবিরোধী যে অপপ্রচার চালাচ্ছে, এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব সম্প্রদায়ের ভূমিকার প্রশংসা করা হয়েছে। একইসঙ্গে যেকোনো উসকানির মুখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
আসিফ নজরুল বলেন, সবাই (রাজনৈতিক দলগুলো) একটি কথা বলেছেন, আমাদের আরও শক্তিহীন, দুর্বল, নতজানু ভাবার কোনো রকম কোনো অবকাশ নেই। যেকোনো ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব এবং আমাদের ঐক্য অটুট রাখব।
আইন উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো বলেছে, আমরা সাহসী থাকব, আমরা ভবিষ্যতে যেকোনো প্রচারণা এলে, উসকানি এলে আমরা আমাদের ঐক্যকে আরও বেগবান দেখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব। সব দলমত নির্বিশেষে একটি সমাবেশ করার পরামর্শ এসেছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, প্রস্তাব আকার এসেছে, গোটা জাতি ভারতের অপপ্রচারে বিরুদ্ধে যে ঐক্যবদ্ধ আছে… একটি সমাবেশ করতে পারি কি না সবাই মিলে; পলিটিক্যাল একটি কাউন্সিল করা যায় কি না; নিরাপত্তা কাউন্সিল করা যায় কি না; প্রস্তাবনা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, সবার (রাজনৈতিক নেতাদের) একই সুর ছিল- আমাদের মধ্যে মত-পথ-আদর্শের ভিন্নতা থাকবে, আমাদের রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকবে, অবস্থার ভিন্নতা থাকবে, কিন্তু দেশ ও সার্বভৌমত্ব এবং অস্তিত্বের প্রশ্নে আমরা সবাই এক। সবার উপরে দেশ। এ থেকে আমরা কখনো বিচ্যুত হব না, বাংলাদেশকে দুর্বল দুর্বল নতজানু ও শক্তিহীন ভাবার কোনো অবকাশ নেই।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, বাংলাদেশবিরোধী বিভিন্ন তৎপরতা চলছে। হাইকমিশনে হামলা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ, বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা এসবের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। ভারতের এসব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার যে আত্মমর্যাদাশীল সাহসী ভূমিকা নিয়েছে, তার প্রশংসা করা হয়েছে এবং সরকারের সঙ্গে সলিডারিটি (সংহতি) প্রকাশ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, একইসঙ্গে ভারতের এসব প্রচারণার বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালীভাবে এবং আরও বেগবানভাবে মোকাবিলার কথা বলা হয়েছে। আসিফ নজরুল জানান, আমাদের যারা প্রবাসী তাদের, বন্ধু রাষ্ট্রের সহযোগিতা এবং বিদেশি সাংবাদিকদের নিয়ে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমাদের যোগাযোগ দক্ষতা এবং আইনি দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, গত ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে সেটি প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়েছে। রামপালসহ বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর যেসব চুক্তি রয়েছে, সেগুলো বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে।