হঠাৎ করে সরকার মূলতঃ আইএমএফ-এর সুপারিশে বিভিন্ন দ্রব্যের উপর মূল্য সংযোগ কর বা ভ্যাট বৃদ্ধি করেছে তাতে দেশের জনগণ শুধু উদ্বিগ্ন নন ব্যবসায়ীরাও ক্ষুদ্ধ বটে। এমনিতে দেশের মানুষ দ্রব্যমূল্যের কষাগারে জর্জরিত। তারপর এনবিআর বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এর মতামতের ভিত্তিতে সরকার জনগণের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বিবেচনা না করে পুনরায় ভ্যাট বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তা মূলতঃ জনবিরোধী। সরকারকে প্রথমেই দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ-আলোচনা করে এ ধরনের সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারতেন যা ছিল সকল মহলের নিকট গ্রহণযোগ্য। আসলে ক্ষমতায় গেলে যে কেউ হোক দেশের মানুষের দুর্ভোগ ও কষ্টের কথা বেমালুম ভুলে যায়। সরকার বলছেন ভ্যাট বাড়ালেও জিনিসপত্র দামের উপর তেমন কোন প্রভাব পড়বে না ইহা কিন্তু ঠিক নয় । সরকার রেস্তোরা, হোটেল, পোশাক, বিমান এমনকি এলপিজি গ্যাস, রে¯েঁÍারায় খাবারসহ শতাধিক পণ্য সামগ্রীর উপর ৭.৫ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে যা জাতির এই ক্লন্তি লগ্নে কোন প্রয়োজন ছিল না। যেমন সাবান, ঔষধ, মিষ্টি, বি¯কুট, টমেটোর সস, ফলের জুস, সিগারেট, আচার, বার্ণিশ ও লেকার, ডিটারজেন্ট পাউডার, মোবাইল সেবা, বন্ডব্যান্ড ইন্টারনেট সহ শতাধিক পণ্য সামগ্রীর দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে করে দেশের মানুষের জীবনে চরম দূর্ভোগ নেমে আসবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। গরীব-মধ্যবিও পরিবারের জন্য এ ধরনের ভ্যাট বৃদ্ধি করা ”মরার উপর খাড়ার ঘা” ছাড়া আর কিছুই নয়। এতে মুল্যস্ফীতি শুধু বাড়বে তা নয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হতে পারে। কষ্ট দূর্ভোগে চলা গরীব মানুষের ওপর কর আরোপের চাপ দুঃখজনক। শুল্ক করের পরিমাণ না বাড়িয়ে এর আওতা বাড়ানো উচিৎ ছিল। ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে দেশে সংকট ও সংশয় বাড়বে। রাস্তা-ঘাটে ভ্যাট ইন্সপেক্টরদের দৌরাত্ব কমাতে হবে। তারা অতিমাত্রায় আয়করদাতা ও ভ্যাট প্রদানকারীদের অযথা ভয়ভীতি ও হয়রানি করে থাকে। মূলতঃ আয়কর দেওয়া নেওয়ার পদ্ধতিতে আরো স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা আনার ব্যাপারে এনবিআরকে জনবান্ধব হতে হবে। এক্ষেত্রে স্বচ্ছ কর ব্যবস্থা ও স্বচ্ছ করদাতাদের সম্মান প্রদানের মাধ্যমে দেশে আরো করদাতার সংখ্যা শুধু বৃদ্ধিই পাবে তা নয় সরকার আরো হাজার হাজার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ে সক্ষম হবে। প্রত্যেক্ষ কর ব্যবস্থা যত সহজ করা হবে ততোই করদাতাদের হয়রানি, বিড়ম্বনা ও দূর্ভোগ কমে আসবে। উল্লেখ্য দেশ গঠনের কাজে করদাতারা বিরাট ভূমিকা পালন করলেও মাঠ পর্যায়ে এক শ্রেণীর আয়কর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দৌরাত্বে কর ও ভ্যাটদাতারা অতিষ্ট।
নতুন করে ভ্যাট বৃদ্ধি ও একের পর এক সংস্কারের নামে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা উন্নয়ন কোন দিকেই সরকার এগোতে পারছে না। গোজামিল প্রশাসন দিয়ে সরকারের বেশি দিন অবস্থান কোনভাবেই মঙ্গলজনক নয়। ইতিমধ্যে সাইবার সুরক্ষা আইনের মাধ্যমে সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের উপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। তাদেরকে ভয় ভীতি দেখানো দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর নয়। তবে সরকারের এই মুহূর্তে ভ্যাট বাড়ানোতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ভীষন কষ্ট পেয়েছে। বাজারে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ রয়েছে। এমনিতে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় প্রায় ছয় মাস ব্যবসায় মন্দাভাব থাকায় অনেক ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এমনিতে শিল্প-বাণিজ্যে ধস নেমে এসেছে। বিমানের টিকেট বৃদ্ধির কারনে মানুষ আর বিমান ভ্রমণে আগ্রহী হয়ে উঠবে না। তৈরি পোশাকের ব্যবসা আগের মত নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন এই বাড়তি আয় জনগণের জন্য অনেক কষ্টদায়ক যা আগুনের ঘি ঢালার মত। দেশের অর্থনীতির চাঙ্গা করার ব্যাপারে বর্তমানে অন্তবর্তীকালীন সরকারের যথেষ্ট অবহেলা ও উদাসীনতার পরিলক্ষিত হচ্ছে। অর্থ উন্নয়নে বা সার্বিক কল্যানে ব্যয় না করে অনেকটা লাইনচ্যুতভাবে খরচ করা হচ্ছে। ইহা দেশ ও রাষ্ট্রের জন্য সুখকর নয়। তবে কর আদায়ের বিদ্যমান কাঠামো পদ্ধতিতে যথেষ্ট গাফলতি থাকার কারণে দেশের রাজস্ব আয় সঠিকভাবে অর্জিত হচ্ছে না। বিশ্বের সকল দেশেই রাজস্ব আদায়ের প্রদান ঘাটি হচ্ছে কর। যে যত বেশী বড় ধনী তিনি তত বেশী আয়কর দিবেন আর আমাদের দেশে করের আওতা না বাড়িয়ে রাজস্ব আয়-কে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে । এখানে বৈষম্য রয়েছে। আমরা মনে করি ভ্যাট নয়, প্রয়োজনে সাধারণ মানুষের ওপর থেকে করের বোঝা কমাতে হবে। উল্লেখ্য, আয়কর আদায়ের ক্ষেত্রে এনবিআর-এর জটিলতার কোন সীমা নেই। বিওশালী বা বড় ব্যবসায়ীরা নানা জাল-জালিয়াতের মাধ্যমে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়ে আসছে। এখানে বর্তমান সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তাদেও জন্য রাজস্ব বৃদ্ধির ব্যবস্থা নিতে হবে। আশাকরি মানবিক দৃষ্টিতে ভ্যাট বৃদ্ধির প্রথা থেকে সরকার জনস্বার্থে সরে আসবেন অথবা বিষয়টি পূণঃবিবেচনা করবেন।
Subscribe to Updates
Get the latest creative news from FooBar about art, design and business.
বৃহস্পতিবার ১৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ। ৩০শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শুল্ক-কর বৃদ্ধিতে জনদূর্ভোগ বাড়বে
4 Mins Read২৪ Views