শরনখোলায় শতবর্ষী রাস্তায় পাকা দেয়াল তৈরী

শরনখোলায় শতবর্ষী রাস্তায় পাকা দেয়াল তৈরী

সঞ্জয় কুলু (শরণখোলা, বাগেরহাট)
বাগেরহাটের শরণখোলায় চলাচলের শতবর্ষী একটি রাস্তা নিজেদের দাবি করে দেয়াল তৈরি করে ১৩টি পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের রাজেশ্বর গ্রামের প্রভাবশালী মাওলানা দেলোয়ার হোসেন খান ও তার স্ত্রী তুলি বেগম ওই রাস্তাটি তার জমির ওপর থেকে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে সেখানে দেয়াল তুলে দেন। রাস্তার মাঝখানে উঁচু দেয়ালের কারণে ১৩ পরিবারের শিক্ষার্থী, বয়স্ক, প্রতিবন্ধি, শিশুসহ ওই এলাকার শত শত মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা যায়, আমিনুর খানের বাড়ি থেকে রামচন্দ্র মিস্ত্রির বাড়ি পর্যন্ত রাস্তারিট দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০০ ফুট। ওই রাস্তাটি স্বাধীনতার আগে থেকেই ১৩ পরিবার এবং জিলবুনিয়া, রাজেশ্বর, কদমতলা ও লাকুড়তলা গ্রামের হিন্দু-মুসলিমসহ শত শত মানুষ মিলেমিশে ব্যবহার করে আসছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে টিআর ও হতদরিদ্র প্রকল্প থেকে কয়েকবার সংস্কারও করা হয়েছে রাস্তাটি। কিন্তু প্রভাবশালী মাওলানা দেওয়ার খান হঠাৎ করে রাস্তার জমি নিজের দাবি করে সেখানে পাকা দেয়াল তৈরী করেন। সর্বশেষ গত শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে সেখানে আরো উঁচু করে ইট গাথা শুরু করলে পৃুলিশ গিয়ে সেই কাজ বন্ধ করে দেন। কিন্তু চলাচলের পথ বন্ধই রয়ে গেছে।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন, ষষ্ঠ শ্রেণির জাকারিয়া, বুশরা আক্তার, দ্বিতীয় শ্রেণির সুষ্মিতা ও হালিমা জানায়, রাস্তায় দেয়াল থাকায় তাদের স্কুলে যেতে খুব সমস্যা হচ্ছে। প্রায় একমাস ধরে তারা ঠিকমতো ক্লাসে যেতে পারেনি। রাস্তার ওপর থেকে দেয়াল সরিয়ে নিয়ে তাদের স্কুল-মাদরাসায় যাওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানায় এই শিশু শিক্ষার্থীরা।
হতদরিদ্র মতিয়ার রহমান (৭১) জানান, তিনি ভ্যানে করে গ্রামে গ্রামে কাচামাল বিক্রি করেন। চলার পথ বন্ধ করে দেওয়ায় তিনি ভ্যান নিয়ে বের হতে পারছেন না। দেলোয়ার মাওলানা রাস্তা বন্ধ করায় তার ব্যবসাও বন্ধ। এখন সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। রাস্তাটি দ্রুত খুলে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন এই বৃদ্ধ।
অবরুদ্ধ ১৩ পরিবারের দিলিপ কুমার মিস্ত্রি, ইব্রাহিম তালুকদার, জামাল শিকদার, পান্না তালুকদার, মতি হাওলাদার জানান, প্রায় এক’শ বছর আগে তাদের বাবা-দাদার আমল থেকেই এই রাস্তাটি ব্যবহার করে আসছেন। মাওলানা দেলোয়ার খানের পূর্বপুরুষরা এই জমি জনগণের চলাচলের জন্য দিয়ে গেছেন। কিন্তু দেলোয়ার হোসেন এখন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করাসহ রাস্তার মাঝখানে পাকা দেয়াল নির্মাণ করেছেন। এখন তারা ১৩ পরিবার একেবারেই অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন।
তারা জানান, শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না। এমনকি কেউ অসুস্থ হলে তাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়ারও কোনো উপায় নেই। তাদের পরিবারগুলোর মধ্যে সবাই হতদরিদ্র ও দিনমজুর। কেউ অন্যের বাড়ি ও কৃষি জমিতে কাজ করেন। আবার কেউ ভ্যান-ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালান। কিন্তু রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে কেউ কোনো কাজ করতে পারছেন না। দেলোয়ার খান ঢাকায় থেকে নির্দেশ দিয়ে তার স্ত্রীকে দিয়ে এই রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ করে তাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। দ্রুত রাস্তার ওপর থেকে দেয়াল সরিয়ে চলাচলের পথ খুলে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।
প্রতিবেশি বাচ্চু তালুকদার জানান, এই রাস্তার বয়স এক শ’ বছরেরও বেশি। মাওলানা দেলোয়ার হোসেন খানের পূর্ব পুরুষরা এই রাস্তায় মানুষের চলাচলের জন্য দিয়ে গেছেন। দেলোয়ার মাওলানা রাস্তায় দেয়াল তুলে শুধু ১৩ পরিবারের চলার পথই না, আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষের পথও বন্ধ করেছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. কাওসার আকন জানান, রাস্তাটি বহু বছরের পুরনো। এই রস্তায় সরকারি বরাদ্দ থেকে কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু দেলোয়ার মাওলানার নির্দেশে তার স্ত্রী হঠাৎ সেখানে দেয়াল তুলে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করায় ১৩টি পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। দেলোয়ার কারো কোনো কথা মানতে চান না। তারপরও এব্যাপারে বসে মিমাংসা করার চেষ্টা করা হবে।
শরণখোলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুব্রত কুমার সরদার জানান,গত সকালে (শুক্রবার) রাস্তায় আরো উঁচু করে দেয়ালের কাজ করা শুরু করলে পুলিশ পাঠিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মাওলানা দেলোয়ার হোসেন খান রাস্তার জমি তার বলে দাবি করছেন। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান করার জন্য উভয় পক্ষকে বলা হয়েছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, মাওলানা দেলোয়ারের বিরুদ্ধে নাশকতা, ধর্ষণসহ একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। যে কারণে তিনি পলাতক রয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানার জন্য মাওলানা দেলোয়ার খানের মোবাইলে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার স্ত্রী তুলি বেগম স্বামীর নামে বিভিন্ন মামলা থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, এই রাস্তার জমি আমাদের। এখান থেকে কাউকে চলতে দেব না। এখানে আমরা ইন্ডাস্ট্রি করবো। তাই রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি। ##

Share This Post