নিজস্ব প্রতিবেদক
ডলারের দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছে টাকার মান। এর প্রভাব পড়ছে সব খাতে। বাড়ছে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়। পিছিয়ে যাচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়ন। এক্ষেত্রে কিছু প্রকল্প সংশোধন করছে সরকার। কিছু প্রকল্পের মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। আবার ডলারের দাম বড় প্রকল্প বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জের মুখেও ফেলছে। এর ধারাবাহিকতায় ‘মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পে এক ধাপে ৬ হাজার ৫৫৪ কোটি ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। এর ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াবে ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা। ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবের পাশাপাশি চলমান এ প্রকল্পের মেয়াদও আরও তিন বছর বাড়াতে চায় মন্ত্রণালয়।
পরিকল্পনা কমিশনের একনেক উইং সূত্রে জানা গেছে, সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় একনেক সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতে সভাপতিত্ব করবেন। সভার কার্যতালিকায় প্রকল্পটি স্থান পেয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। তার মধ্যে জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে পাওয়া দুই হাজার ২১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্পের আইটেমগুলোর ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। ফলে বন্দর নির্মাণ অংশে সামগ্রিকভাবে সর্বশেষ অনুমোদিত ডিপিপি থেকে দুই হাজার ৫১৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে। প্রকল্পটি ২০২০ সালে একনেক সভায় অনুমোদিত হলেও প্রকল্পের প্যাকেজগুলোর প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয় ২০২২ সালের জুন মাসে। বন্দর কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, প্রকল্প অনুমোদনকালে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার সঙ্গে ডলারের বিনিময় হার ছিল ১ ডলার সমান ৮৫ টাকা। দরপত্র দাখিলের সময় (২৮ নভেম্বর ২০২২) মুদ্রা বিনিময় হার ছিল এক ডলার সমান ৯৮ টাকা। এতে দেখা যায় প্রাক্কলনের সময় থেকে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যমান প্রায় ১৪ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়ে। পরবর্তী সময়ে দরপত্র মূল্যায়নের সময় (২৭ আগস্ট ২০২৩) পর্যন্ত ডলারের দাম অব্যাহতভাবে বেড়ে প্রাক্কলনকালীন বিনিময় হার অপেক্ষা তা প্রায় ২৭ শতাংশ বেড়ে যায়।
নতুন প্রস্তাবিত ব্যয়ের কারণে প্রকল্পের মোট ব্যয় গিয়ে ঠেকছে ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকায়। এ সমুদ্রবন্দর নির্মিত হলে দেশের কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা অনেক বাড়বে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ বন্দর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চাহিদা মেটানো এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ত্বরিত বন্দরসেবা দিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের জন্য টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের প্যাকেজ-১ এর ব্যয় প্রায় এক হাজার ৩৫০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া, সিডি-ভ্যাট, পোর্ট চার্জ, ভূমি অধিগ্রহণ, কন্টিনজেন্সি ও পরামর্শক সেবাসহ রাজস্বের কয়েকটি খাতেও ব্যয় বেড়েছে।
বাংলাদেশি টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বাড়ায় এ ব্যয় বেড়েছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির জন্য ৪৬১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, স্কোপ অব ওয়ার্ক পরিবর্তনের জন্য ৬৭৪ কোটি ৬৪ লাখ, হালনাগাদ রেট শিডিউলের জন্য ১ হাজার ৯১৪ কোটি ১৬ লাখ এবং অ্যাকসেসিবিলিটি উইথ হাই ডিফিকাল্টি জোনের জন্য ৯০৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, জাইকার অনুমোদন বা অনাপত্তি দিতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় এক বছর অতিরিক্ত সময় নেওয়া হয়। বিডারদের প্রস্তাবিত মূল্য প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে বেশি হওয়ায় জাইকার পরামর্শে প্রাইস নেগোসিয়েশনের অতিরিক্ত সাড়ে চার মাস প্রয়োজন হয়। ফলে নির্ধারিত সময়ে ভৌত ও বাস্তব কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে প্রকল্পের বন্দর অংশের প্যাকেজ-১ এর ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে চুক্তির মেয়াদ ৪২ মাস নির্ধারিত। চলতি বছরের আগামী জুন-জুলাই মাসে সম্ভাব্য চুক্তি সম্পাদন করা যাবে। ফলে ৪২ মাসের কার্যাদেশ অনুযায়ী ডিসেম্বর ২০২৭ সালে কাজ সমাপ্ত হবে এবং পরবর্তী সময়ে আরও এক ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড নির্ধারিত আছে। সে লক্ষ্যে প্যাকেজ-১ এর কার্যক্রম সমাপ্ত করতে ডিসেম্বর ২০২৯ পর্যন্ত সময় প্রয়োজন, জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে সওজ অধিদপ্তর জানায়, সংশোধিত প্রকল্প অনুযায়ী সড়ক ও সেতু নির্মাণের একটি প্যাকেজের রিটেন্ডারের প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে নতুনভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজটি বাস্তবায়ন করতে হলে প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২৮ এর পরিবর্তে ডিসেম্বর ২০২৯ পর্যন্ত নির্ধারণ করা প্রয়োজন। পুরো প্রকল্পটি যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে বাস্তবায়ন মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২৯ পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন।
Subscribe to Updates
Get the latest creative news from FooBar about art, design and business.
সোমবার ২রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ। ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের ব্যয় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে
3 Mins Read৫৫ Views