পদোন্নতি কার্যক্রম নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। পদের বিপরীতে প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা না থাকার পরও ডিসেম্বরের কাছাকাছি সময় এসে ভিত্তিকাল ধরা হচ্ছে জুন মাসকে। এ মাসকে ভিত্তিকাল ধরলে অনেক পদশূন্য থেকে যাবে। এতে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে। মাত্র কয়েক দিন অপেক্ষা করলেই একটি সুষ্ঠু পদোন্নতি কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হতো। কয়েক মাসের জন্য এমন তাড়াহুড়ো কর্মীদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করছে। ব্যাংকে কর্মরত অনেকেই এ কার্যক্রমকে অনৈতিক বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন।
কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতি নীতিমালা-২০১২-এর ২ দশমিক ৩ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, উচ্চতর পদে পদোন্নতির জন্য জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতিযোগ্য শূন্যপদে ১ অনুপাত ৩ হারে পদোন্নতির বিবেচনা করতে হবে। তবে ১ অনুপাত ৩ হারে বিবেচনার পর পদোন্নতিযোগ্য শূন্যপদ পূরণে প্রয়োজনীয় সংখ্যক যোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী পাওয়া না গেলে সে ক্ষেত্রে পদোন্নতি বিবেচনাযোগ্য পরবর্তী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পুনরায় ১ অনুপাত ৩ হারে পদোন্নতির বিবেচনা করতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিবছর ৩০ জুন এবং ৩১ ডিসেম্বরকে পদোন্নতির ভিত্তিকাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সাম্প্রতিক পদোন্নতি কার্যক্রম নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, অবস্থা সাপেক্ষে জুন বা ডিসেম্বর দুটির যেকোনো একটি সময় পদোন্নতির ভিত্তিকাল ধরা যেতে পারে। ২০২০ সালেও ডিসেম্বর মাসকে ভিত্তিকাল ধরে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। শূধু জুনকে পদোন্নতির ভিত্তিকাল হিসেবে বিবেচনা করায় ডেপুটি মহাব্যবস্থাপকের ৫৯টি শূন্যপদের বিপরীতে প্রার্থীসংখ্যা ৬৫ জন। অথচ ডিসেম্বরকে পদোন্নতির ভিত্তিকাল হিসেবে বিবেচনা করলে ডেপুটি মহাব্যবস্থাপকের ৫৯টি শূন্যপদের বিপরীতে প্রার্থীসংখ্যা হবে ১৬৫জন জন।
একইভাবে জুন মাসকে ভিত্তিকাল ধরে সহকারী মহাব্যবস্থাপকের ১৫৯ শূন্যপদের বিপরীতে প্রার্থীসংখ্যা ১৬৭ জন অথচ ডিসেম্বরকে পদোন্নতির ভিত্তিকাল হিসেবে বিবেচনা করলে উপমহাব্যবস্থাপকের ১৫৯টি শূন্যপদের বিপরীতে প্রার্থীসংখ্যা হবে ৩৪৯ জন।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদবিন্যাস সংক্রান্ত নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জ্যেষ্ঠ মুখ্য কর্মকর্তা পদে মোট ২০৩টি শূন্যপদের বিপরীতে প্রার্থীসংখ্যা ৮১ জন। অথচ ডিসেম্বরকে পদোন্নতির ভিত্তিকাল হিসেবে বিবেচনা করলে জ্যেষ্ঠ মুখ্য কর্মকর্তা পদে ২০৩টি শূন্যপদের বিপরীতে প্রার্থীসংখ্যা হবে ১৫৬ জন।
জুন ভিত্তিক পদোন্নতি প্রধান করা হলে গত ১৭-০৮-২০২৩ তারিখ যেসকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগন চকরীকাল ৩ বছর পূর্ণ করেছেন এবং পদোন্নতি নীতিমালার সকল শর্ত পূরণ করেছেন তার বাদ পরবেন যা তাদের প্রতি চরম অবিচার। এসকল কর্মকর্তাদের বাদ দিলে নীতিমালার ১.৬ ও ২.৩ সরাসরি ভঙ্গ হবে।
অধিকসংখ্যক প্রার্থী থেকে পদোন্নতি বিবেচনা করলে স্বাভাবিকভাবেই মেধাবীরা বেশি সুযোগ পাবে এবং তাতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক বেশী উপকৃত হবে এবং পদোন্নতি কার্যক্রম নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ কমবে। অথচ জুন মাসকে ভিত্তিকাল ধরে পদোন্নতি কার্যক্রম চালানো হলে বলতে গেলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জ্যেষ্ঠ পদ গুলো পূরণ হয়ে যাবে । অন্যদিকে অসম এই নিয়োগে সব কটি জ্যেষ্ঠ পদ পূর্ণ হয়ে গেলে বিনা পদোন্নতিতে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিতে হবে মেধাবী অনেক কর্মকর্তা । এমনকি তারা পদোন্নতি প্রক্রিয়ায়ই অংশ নিতে পারবেন না। এসব পদ পূরণ হয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে যোগ্য প্রার্থীরা পদোন্নতি পাবেন না বলে অভিযোগ করেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বিদ্যমান পদোন্নতি নীতিমালা ভঙ্গ করে এমন কিছু কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে একটি বিশেষ শ্রেণিকে অবৈধভাবে সুবিধা দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে । নীতিমালার এ বিষয়টি আমলে না নিয়ে শূন্যপদের বিপরীতে তিনজন প্রার্থী না থাকার পরও তাড়াহুড়ো করে একশ্রেণির কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। নীতিমালায় ৩০ জুন এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ‘অথবা’ এর পরিবর্তে ‘ও’ শব্দটি ব্যবহার করা হলেও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে বছরে একবার পদোন্নতি দেয়া হয়। এতে চলতি বছর পদোন্নতির ভিত্তিকাল ৩০ জুলাই ধরা হলে পদের বিপরীতে প্রার্থীর অনুপাত ঠিক থাকে না। কিন্তু এর ভিত্তিকাল ডিসেম্বর ধরা হলে পদোন্নতির বিপরীতে প্রার্থীর অনুপাত অনেকটাই সামঞ্জস্যতা রক্ষা করতে সক্ষম হয়।
অন্যদিকেএ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা পদোন্নতি চাচ্ছি, এমন না। আমরা চাচ্ছি সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার অন্তর্ভুক্ত হতে। ডিসেম্বর মাসকে ভিত্তিকাল ধরলে নীতিমালার আনুপাতিক নিয়মও ঠিক থাকে এবং কর্মীদের প্রতি অবিচারও হয় না।