নির্বাচনী মাঠে “বদি”র বৈদ্যালিতে দিশেহারা নৌকা বিরোধীরা

নির্বাচনী মাঠে “বদি”র বৈদ্যালিতে দিশেহারা নৌকা বিরোধীরা

রতন কান্তি দে উখিয়া(কক্সবাজার) :

রাত পেরুলেই ভোট। নির্বাচনী যুদ্ধের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে কক্সবাজার ৪ উখিয়া টেকনাফ আসনে নৌকার প্রার্থী শাহীন আক্তারের স্বামী সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির বৈদ্যালিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের নুরুল বশর। উখিয়া উপজেলায় ঈগলের এজেন্ট দেওয়ার কর্মী সমর্থক খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।এদিকে দুই উপজেলায় প্রায় চল্লিশ হাজার দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মাঠে নৌকার পক্ষে কাজ করছেন এবং ৭ জানুয়ারি ভোটের দিনের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন নৌকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।

টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ভোটার ও স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক( ৫০)ব্যবসায়িক কাজে শুক্রবার উখিয়ায় আসেন। টেকনাফের সর্বশেষ নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় তার সাথে তিনি জানান নির্বাচনের শুরু থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ঈগল প্রতীকের প্রার্থী নুরুল বশরের পক্ষে বেশ জমে উঠেছিল। তুমুল প্রতিদ্বন্দিতার বাতাস তার পক্ষে বইছে কারণ উপজেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সহ সহযোগী সংগঠন গুলোর নেতাকর্মীরা এককাট্টা হয়ে কোমর বেঁধে নির্বাচন করে। এলাকার ছেলে হিসেবে আঞ্চলিকতার টান তুলে প্রভাবও ফেলে।

কিন্তু শুক্রবার থেকে (৫ই জানুয়ারি) সেই চিত্র পাল্টে যায়। ছয়টি ইউনিয়নের পাঁচ বর্তমান চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন এলাকার গ্রহণযোগ্য পরিচিত ভোটের কারিগর হিসেবে খ্যাত প্রায় শতাধিক ব্যক্তি কে নৌকার পক্ষে মাটি মিয়েছেন বদি। এরা প্রকাশ্যে দিনরাত নির্বাচনে নৌকার জন্য কাজ করছেন। ফলে হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। এতে ঈগল অনেকটা ধরাশায়ী। নৌকার কাছাকাছিও যেতে পারবেনা বলে তিনি ধারণা করছেন

সেই অবস্থা থেকে কাটিয়ে উঠার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন বশরের ছোট ভাই টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরল আলম ও তার সহযোদ্ধারা। নির্বাচনী মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখা যায় টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সাংসদ মরহুম অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর বড় ছেলে মোরশেদ ঈগলের পক্ষে শুরু থেকে মরিয়া হয়ে নির্বাচন করছেন অপরদিকে ছোট ভাই হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী চ্যালেঞ্জ নিয়ে নির্বাচন করছেন নৌকার পক্ষে।

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাত নেতা নুর আহমদ আনোয়ারিও নিরবে শাহীন আক্তারের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে নির্বাচন করছেন। এছাড়াও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সাবেক জেলা ছাত্রলীগ নেতা ও ভাইস চেয়ারম্যান এইচএম ইউনুস বাঙালি, এবং টেকনাফের আরেক জনপ্রিয় ব্যক্তি জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর নৌকার পক্ষে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে ব্যাপক ভোট পাওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচনী কৌশলে এগোচ্ছেন। ভোট পেতে প্রচারণা শেষে ভোটের বৈতরণী পার হতে নেন নানা প্রস্তুতি।
এসব সমীকরণে টেকনাফে নৌকার অবস্থান ঈগলের চেয়ে বিশাল ব্যবধান হতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

সোহেল আহমদ বাহাদুর এবং টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর বলেন গণমানুষের জনপ্রিয় নেতা বদির ম্যাজিক শুরু হয় বৃহস্পতিবার থেকে।টেকনাফের বিশ হাজারের অধিক
কর্মীবাহিনী ৬০টিি কেন্দ্রে ভোট উৎসবে নৌকার পক্ষে মাঠে কাজ করছেন।

সরেজমিন নির্বাচনী মাঠ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় উখিয়ার জালিয়া পালং ইউনিয়নের মনখালি এলাকার মৎস্যজীবী পরিবারের গৃহবধূ মালেকা বানু (৪৫),দিনমজুর সৈয়দ হোসেন (৩৫),হলদিয়াপালং ইউনিয়নের রিকশাচালক দুদু মিয়া (৩০),জানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোখার সময়সহ যেকোন বিপদে ছুটে এসে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন আব্দুর রহমান বদি তাই তার স্ত্রী শাহীন আক্তার কে নৌকায় ভোট না দিয়ে আর কাকে দেবো। উপকূলের অধিকাংশ ভোটই নৌকায় পড়বে।
একইভাবে নৌকায় ভোট দেওয়ার কথা জানিয়ে পালংখালীর রহমতের বিলের কাঠুরিয়া আব্দুর শুক্কুর (৫০)রাজাপালং এর বয়োবৃদ্ধ নূর হোসেন( ৭০)বলেন এখন আর কাঁদা মাটি দিয়ে হাঁটতে হয় না। গ্রামের সব পাকা রাস্তা। তাছাড়া ভিজিডির চাউল সহ নানা সুযোগ সুবিধা পেয়ে আমরা অনেক সুখে আছি,যে সরকারের নুন খেয়েছি নৌকায় ভোট দিয়ে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব। তারা আরো বলেন আমাদের প্রিয় বদির বৈদ্যালিতে নৌকা বিরোধীরা কূলকিনারা পাবেন না।
এখনই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

উখিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী কামরুন্নেসা বেবী নির্বাচনী ব্যালট যুদ্ধের সর্বশেষ প্রস্তুতি সম্পর্কে জানান হলদিয়াপালং ইউনিয়নের তার বাড়ির আশে পাশের চারটি কেন্দ্রে শতকরা ৮০ ভাগ ভোট নৌকায় পড়বে। এ সকল কেন্দ্রে আমিও আমার স্বামী চেয়ারম্যান আমিনুল হক আমিনসহ পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে নির্বাচন করেছি আল্লাহর রহমতে রোববার দিন প্রত্যাশা পূরণ হবে।

তিনি আরো জানান গেল বছর ১৫ ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের সময় পুরো শোকের মাস জুড়ে উখিয়া টেকনাফের প্রত্যেক ইউনিয়নে সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির সহায়তায় কাঙ্গালী ভোজ ও শোক সভার আয়োজন হয়। এসব আয়োজনে দুই উপজেলার প্রায় আশি হাজার নেতাকর্মী এতে অংশগ্রহণ করে। উক্ত কর্মসূচির ফলে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মী এবং সাধারণ সমর্থকরা উজ্জীবিত হয়।দেখা দেয় ব্যাপক চাঙ্গা ভাব। নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উক্ত উদ্দীপনা ও চেতনা বর্তমানে নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান নুরুল হুদা জানিয়েছেন উপজেলার ৪৭ টি ভোট কেন্দ্র ভিত্তিক ২০ হাজারের অধিক নেতাকর্মী ভোটের দিন দায়িত্ব পালন করবেন। অত্র উপজেলার জনগণ উৎসবের আমেজে উন্নয়ন এবং সার্বিক সুবিধা পাওয়ার প্রতীক নৌকায় গন রায় দিতে ভোটকেন্দ্রে যাবেন বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। গত বুধবার বৃহস্পতিবার উখিয়া সদর ও কোট বাজারের বিশাল জনসমুদ্রের নির্বাচনী জনসভা এবং ঐতিহাসিক স্মরণকালের গণ মিছিলই প্রমাণ করে অত্র উপজেলায় নৌকার বিশাল ব্যবধানে বিজয়ের প্রতিচ্ছবি। যারা নির্বাচন বানচাল ও বর্জনের জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছেন নীরব ব্যালট বিপ্লবেই সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।

রত্নাপালং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী এবং পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান উখিয়ায় ভোট কেন্দ্রে ঈগল প্রতীকের এজেন্ট দেওয়ার জন্য
যেখানে লোক পাচ্ছে না সেখানে প্রতিদ্বন্দিতামূলক ভোট পাওয়া তো দূরের কথা।

ভোটকেন্দ্রের জন্য ঈগলের এজেন্ট না পাওয়ার বিষয়ে অকপটে একথা স্বীকার করেন উখিয়ায় ঈগলের নির্বাচন পরিচালনাকারীদের মধ্যে সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য নুরুল আলম নুরু ও উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী ভাগিনা মোক্তার আহমদ চৌধুরী। তারা বলেন যে যত কথাই বলুক শেষ পর্যন্ত উখিয়া টেকনাফের জনগণ গেল ১৫ বছরের শাসনামলের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে নীরব ব্যালট বিপ্লব ঘটাবে। যা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনের শেষ সময়ে এসে যিনি ম্যাজিক দেখান এবং উখিয়া টেকনাফের মানুষকে অবাক কান্ড ঘটিয়ে তাক লাগিয়ে দেন কৌশলের জাদুকর খ্যাত সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদি।
তিনি বলেছেন আমি কথায় না কাজে বিশ্বাসী,ইতিমধ্যে তার প্রমাণ শুরু হয়ে গেছে নৌকার পক্ষে জনতার ঢেউ দেখে জালিয়াপালং এর রাজ্যবিহীন নামধারী রাজা এলাকা ছেড়ে পলায়ন করে স্বঘোষিত মুকুট বিহীন সম্রাটেরএর মত। আল্লাহর অশেষ রহমতে জনতার নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় আমার মত অতি সাধারন একজন মানুষ গরিব দুঃখী পাগল “বদি”র স্ত্রী বিশ্ব নন্দিত নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নৌকার প্রার্থী শাহীন আক্তার ইনশাল্লাহ আগামী ৭ই জানুয়ারি রবিবার প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবে বলে আশা রাখছি।

Share This Post