তারের বেড়া ও নদী মরে যাওয়ায় লোকালয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী

তারের বেড়া ও নদী মরে যাওয়ায় লোকালয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী

সঞ্জয় কুলু (শরণখোলা বাগেরহাট) :
সুন্দরবন সংলগ্ন ভোলা নদী পুনঃখনন ও কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা জরুরি দরকার। ভোলা নদী ভরাট হওয়ার কারণে সুন্দরবনে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বনসংলগ্ন লোকালয় থেকে তারের বেড়া, ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ এবং ভোলা নদী পুনঃখননের কাজ আজও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে সুন্দরবনের বাঘসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী অবাধে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এ ছাড়া বনের পাশের গ্রামগুলোর মানুষ যেকোনো সময় হেঁটে অবাধে বনে প্রবেশ করে আগুন দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছে।
২০১৬-১৭ সালে তৎকালীন প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মো. ইউনুচ আলী সুন্দরবনের মরে যাওয়া ভোলা নদী পরিদর্শন করে আগুন প্রতিরোধ ও বনে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বনসংলগ্ন লোকালয়ের পাশ থেকে কাঁটাতারের বেড়া, ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ এবং ভোলা নদী পুনঃখননের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু পাঁচ বছর কেটে গেলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
ভোলা নদীবেষ্টিত শরণখোলা রেঞ্জের দাসেরভাড়ানি টহল ফাঁড়ি থেকে চাঁদপাই রেঞ্জের চাঁদপাই স্টেশন পর্যন্ত লোকালয়ের কোলঘেঁষে ধানসাগর, চাঁদপাই, জিউধরাসহ তিনটি স্টেশন এবং ১০টি টহল ফাঁড়ি রয়েছে। এসব স্টেশন ও ফাঁড়ি অফিসগুলো বনের মধ্যে বয়ে যাওয়া ভোলা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত শাখা খাল ও খালসমূহকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এসব খাল থেকে লোনা ও মিষ্টি পানি প্রবাহিত হয়ে বনের অভ্যন্তরে প্লাবিত হওয়ায় সুন্দরী, গড়ান, গেওয়াসহ নানা প্রজাতির গাছ জন্মায়। কিন্তু ভোলা নদী ভরাট হওয়ায় শাখা খালগুলো মরে গিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে লোনা ও মিষ্টি পানির সংমিশ্রণ না পেয়ে বনের এসব অঞ্চলে সুন্দরী এবং অন্যান্য গাছ আশঙ্কাজনক হারে কমেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনটি ভৌগোলিক দিক থেকে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের অধীনে। ভোলা নদী এবং বনের শাখা খালগুলো ভরাট হওয়ায় এসব এলাকায় সুন্দরী ও অন্যান্য বড় গাছের পরিমাণ কমে গিয়েছে এবং ছোট গাছপালা ও লতাগুল্ম আচ্ছাদিত হয়ে পড়ছে। শুষ্ক মৌসুমে ওই এলাকার বনভূমি শুকিয়ে যায়। মাছ ধরা, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহসহ বা সামান্য কোনো কিছুর প্রয়োজন হলেই বনের পাশের গ্রামগুলোর সাধারণ মানুষ যেকোনো সময় হেঁটে অবাধে বনে প্রবেশ করছে।
সুন্দরবন এবং লোকালয়ের মধ্যবর্তী ভোলা নদীটি ভরাট হতে শুরু করে নব্বই দশক থেকে।। বর্তমানে নদীটি ভরে গিয়ে সরু খালে পরিণত হয়েছে। বনসংলগ্ন শরণখোলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের মো. সাইয়েদ মুন্সি (৯০) বলেন, ভোলা নদী থেকে একসময় বড় বড় তেলের ট্যাংকার ও জাহাজ চলাচল করত। প্রায় দেড় কিলোমিটার চওড়া ছিল এই নদী। নৌকায় বনে যেতে আমাদের আধা ঘণ্টারও বেশি সময় লাগত। সেই নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে।
সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ভোলা নদী এবং বনের অভ্যন্তরের মরা নদী-খাল খনন করে সুন্দরবনকে লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। কাঁটাতারের বেষ্টনী, নিরাপত্তাচৌকি নির্মাণ, টহল জোরদার এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। বনবিভাগকে আধুনিকায়ন করতে হবে। তাহলে অগ্নিকাণ্ডসহ বন অপরাধ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ নুরুল করিম জানান, চলতি জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ১০ কিলোমিটার বেড়া নির্মানের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। বন্যপ্রাণীদের লোকাকয়ে প্রবেশ ঠেকাতে ধাপে ধাপে ৬০ কিলোমিটার এই বেড়া নির্মানের কাজ করা হবে।

Share This Post