রতন কান্তি দে উখিয়া (কক্সবাজার) :
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে টানা দ্বিতীয় বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির স্ত্রী শাহীন আক্তার চৌধুরী। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে প্রায় ৯০,৩৭৩ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হলেন তিনি।
এর আগে একই আসনে গত নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুর রহমান বদি। তবে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এবং নানাভাবে বিতর্কিত হওয়ায় ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হন তিনি। এরপর টানা দ্বিতীয় বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শাহীন আক্তার চৌধুরী।
৭ জানুয়ারি (রোববার) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে উখিয়া ও টেকনাফের ১০৪টি ভোট কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফলে শাহীন আক্তার নৌকা প্রতীকে পান ১,২২,০৮০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র (ঈগল) মুহাম্মদ নুরুল বশর পেয়েছেন ৩১,৭০৭ ভোট।
জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো ১,৭৫৪ ভোট, ইসলামি ঐক্যজোট-আই,ও,জে (মিনার) মুহাম্মদ ওসমান গনি চৌধুরী ৮২৫ ভোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, এনপিপি (আম) ফরিদ আলম পেয়েছেন ৩২৭, বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব) মো. ঈসমাইল পেয়েছেন ২৪৭ ভোট আর তৃণমূল বিএনপি (সোনালি আঁশ) মুজিবুল হক মুজিব পেয়েছেন ২৪৬ ভোট। বাতিলকৃত ভোটের সংখ্যা ২,৯৫৩ টি। ভোটের হার ৪৯.০৫ %।
ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এমপি শাহীন আক্তার চৌধুরী বলেন, এই বিজয় গণতন্ত্রের, এই বিজয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার, এই বিজয় উন্নয়নের। ইনশাআল্লাহ অতীতের ন্যায় এলাকায় শান্তি ও উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। দলমত নির্বিশেষে আমি এলাকার অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করবো।
উল্লেখ্য, এর আগে ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র থেকে এজেন্টের বের করে দেয়ার অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেছেন কক্সবাজার-৪ আসনের জাতীয় পার্টি মনোনীত নাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো। দুপুর ১টার দিকে উখিয়ায় তার নিজ অফিসে কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এসময় ভূট্টো বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়। কিন্তু যেসব কেন্দ্রে আমি ভোট পাব সেসব কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে, উখিয়ার জালিয়াপালং, রত্মপালং ও রাজাপালং ইউনিয়ন থেকে আমার সব এজেন্টকে বের করে দেয়া হয়। বিষয়টি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানো পরও কোনো ব্যবস্থা না নেয়া হয়নি। একই সঙ্গে ব্যাপক অনিয়ম, জাল ভোট প্রদান, কেন্দ্র দখল করা হয়েছে। তাই ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
একই অভিযোগ তুলে বেলা ৩টার দিকে ভোট বর্জন করেছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল বশর।
তিনি বলেন, কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতি, জাল ভোট, এজেন্ট বের করে দেওয়া ও নজিরবিহীন অনিয়ম, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষপাত করে আমার নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাই আমি এই ভোট বর্জন করলাম।
এদিকে শাহীন আক্তারের স্বামী উখিয়া টেকনাফের রাজনীতিতে ম্যাজিক দেখানোর জাদুর কারিগর সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদি বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকাকে বিজয়ী করায় উখিয়া-টেকনাফবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন
এবং অভিনন্দন জানান। প্রতিদ্বন্দ্বী অপর প্রার্থীরা
জনগণের সাড়া না পেয়ে পরাজয় নিশ্চিত দেখে পাঁতানো অভিযোগের অজুহাত দেখিয়ে নির্বাচনের শেষ সময়ে এসে সরে দাঁড়ান। তিনি তার স্ত্রী তথা নৌকার এ বিজয় দুই উপজেলার জনগণকে উৎসর্গ করেন।
কক্সবাজার-৪ এর সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা উখিয়ার ইউএনও তানভীর হোসেন জানান, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ চলে নিয়মমতো বিকেল ৪টায় শেষ হয়। এরমধ্যে কোনো প্রার্থীর পক্ষে কেউ লিখিতভাবে বিষয়টি জানাননি। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী, ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলো। এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি।