শরৎকাল মানেই কাশফুলের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে অক্টোবরের শেষ এ সময়ে কাশফুলের মৌসুম। সাদা ও তুলোর মতো ফুলগুলো বছরের এই সময় দেশের বিভিন্ন নদীর পাড়ে কিংবা মাঠের ধারে উঁকি দেয়। প্রকৃতিপ্রেমীরা প্রকৃতির এই রূপ উপভোগ করতে ছুটে যান সেসব স্থানে। তবে এখন শুধু প্রকৃতিপ্রেমীরা নন, সেলফিপ্রেমীরাই বেশি ঢুঁ মারছেন কাশবনে। সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিতে না পারলে যেন ঘুম হয় না অনেকেরই! বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মাঝে কাশফুল একটি সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। কাশফুলের সৌন্দর্য এখন শুধু প্রকৃতির নয়, সোশ্যাল মিডিয়ার অন্যতম ট্রেন্ডও বটে। সেলফিপ্রেমীদের ভিড়ে কাশফুল এখন পর্যটকদের কাছে এক নতুন আকর্ষণ। প্রকৃতি, প্রযুক্তি ও পর্যটন একসঙ্গে মিলে তৈরি করছে এক নতুন অভিজ্ঞতা। যা আমাদের সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছে। কাশফুলের সাদা ও তুলোর মতো পুষ্পরাজি শরৎকালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বিশেষভাবে উজ্জ্বল করে তোলে। এর সঙ্গে সেলফি তোলার মাধ্যমে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের একাত্মতা প্রকাশ করে। কাশফুলের সৌন্দর্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে তোলা ছবি, বিশেষ করে নীল আকাশ ও মেঘের পটভূমিতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় অসংখ্য লাইক ও কমেন্ট কাড়ছে।
কাশফুল এখন ইনফ্লুয়েন্সারদের ও সাধারণ সেলফিপ্রেমীদের কাছে বিশেষ ফটোশুট লোকেশন হয়ে উঠেছে। অনেকেই ফ্যামিলি গেট টুগেদার, বন্ধুদের আড্ডা, এমনকি প্রি-ওয়েডিং ফটোশুটেও কাশফুলের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে পছন্দ করছেন। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক- সব প্ল্যাটফর্মেই এই ছবি ছড়িয়ে পড়ছে। কিছু জায়গায় কাশফুলের সঙ্গে সেলফি নিয়ে চ্যালেঞ্জও শুরু হয়েছে। ‘কাশফুলের সঙ্গে সেরা সেলফি’ নামে ফেসবুকে অনেক গ্রুপ ও পেজে চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা তাদের ছবি শেয়ার করছেন। এতে অনেকের মধ্যেই সৃজনশীলতা ও প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হচ্ছে।
কাশফুলের সেলফি ট্রেন্ডের কারণে দেশের বিভিন্ন কাশফুল ঘেরা স্থানে পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। সেলফি প্রেমিকরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধারণ করার পাশাপাশি নিজেদের পোস্টের মাধ্যমে সেসব জায়গাকেও জনপ্রিয় করে তুলছেন। এই সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ড শুধু ব্যক্তিগত আনন্দের জন্য নয়, বরং পর্যটন, ব্যবসা ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
প্রযুক্তির কল্যাণে ক্যামেরাবন্দি করে ফেলা যায় সেই সুন্দর দৃশ্যপটে নিজেদের কিছু সুন্দরতম মুহূর্ত। তাই হাল ফ্যাশনের পাঠকদের জন্য রইল পাঁচটি কাশবনের সন্ধান। ঢাকার মধ্যেই এসব জায়গায় সহজেই যেতে পারবেন এবারের ছুটিতে।
৩০০ ফিট রাস্তাঃ খাদ্যরসিক আর প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য ৩০০ ফিট সড়কের কাশফুলের রাজত্ব অনেক বেশি জনপ্রিয় বেশ কয়েক বছর ধরে। যদিও খাবারের রেস্তোরাঁগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তবে প্রকৃতির নিয়মে এখানকার বিস্তৃত খোলা প্রান্তরে প্রতিবছর শরৎ এলেই কাশফুল আসে তাঁর অপার সৌন্দর্য নিয়ে। এখন ৩০০ ফিটের রাস্তাটা সুন্দর করে পিচঢালাই করায় কালো রাস্তার বিপরীতে আরও বেশি সুন্দর দেখায় দুই পাশের শ্বেতশুভ্র কাশফুল। মেট্রোরেল আর এলিভেটেড এক্সপ্রেসের কল্যাণে এখন সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় এখানে। এ ছাড়া সব সময়ের মতো ঢাকার বাস সার্ভিস তো আছেই ।
দিয়াবাড়িঃ বেশ আগে থেকেই ব্যস্ত জীবনে খানিকটা স্বস্তির আশায় মানুষ ছুটে যায় উত্তরার দিয়াবাড়ির খোলামেলা পরিবেশে। বিভিন্ন ফুড কার্ট, নদীর তীর আর নতুন করে পিচঢালা সুন্দর রাস্তা থাকায় এখন অনেকেই যান এখানে একটু ভালো সময় কাটাতে। তবে শরতের মৌসুমে এখানে মানুষের উপচে পড়ে ভিড়। কারণ একটাই, দিয়াবাড়ির নদীর ধারের কাশবনের এক মায়াবী সৌন্দর্য। ফটোগ্রাফার আর এমনিতেই ছবি তুলতে ভালোবাসেন যাঁরা, তাঁদের এই শরতে সাদা কাশফুলের মধ্যে একটা মনমতো ছবি তো তুলতেই হবে! তাই বৃষ্টি-বাদলের মতিগতি বুঝে চলে যেতে পারেন এখানে যেকোনো ছুটির দিনে ।
আফতাবনগরঃ রামপুরা ব্রিজ থেকে ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে জহিরুল ইসলাম সিটির ভেতরে ঢুকলেই দেখা যাবে কাশবনের শুভ্র দুনিয়া। ঢাকার ঠিক মাঝখানে এই কাশবনে চাইলেই চলে যেতে পারেন শরতের কোনো এক নিরিবিলি বিকেলে।
হযরতপুরঃ কেরানীগঞ্জের হযরতপুরের কালীগঙ্গার তীরে বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে রয়েছে কাশফুলের বন। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রজাপতি বাসে ১০ টাকা ভাড়ায় চলে যেতে পারেন ঘাটারচর। সেখান থেকে টমটম বা সিএনজিতে করে চলে যাওয়া যায় কেরানীগঞ্জ। বছিলা সেতুর পরে আঁটিবাজার পার হলেই হযরতপুর। নৌকা পার হয়ে চলে যেতে পারবেন কাশের চরে। জায়গাটিতে ভিড়ভাট্টা একটু কম হয়।
মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধঃ এখানে নদীর তীরে বালুময় চরে রয়েছে কাশফুলের রাজ্য। চিরচেনা বুড়িগঙ্গা তীরের মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের কাছেই এই কাশবন। বছিলা সড়ক ধরে সামনে গেলে অনেকখানি জায়গাজুড়ে ফাঁকা জমিতে দেখতে পাবেন অবারিত কাশবন। আদাবর হয়ে ঢাকা উদ্যানে নৌকা পার হয়ে চলে যাওয়া যায় এই কাশবনে।
কাশবনগুলো কিছুটা নিরিবিলি ও জনমানবহীন স্থানে হয়ে থাকে। তাই কয়েকজন মিলে গেলে ভালো। আর সন্ধ্যার পর সেখানে না থাকাই শ্রেয়।
অ্যালার্জি বা অ্যাজমার সমস্যা থাকলে কাশবনে না যাওয়াই শ্রেয়। কাশফুলের রেণু পোশাকে আটকে যাওয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে সিনথেটিক বা জর্জেট পোশাক পরতে পারেন। যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে সেদিন বৃষ্টি হয়ে থাকলে না যাওয়াই ভালো, কারণ এ সময় কাশফুলের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়।