ইসলামাবাদস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শহিদ শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মবার্ষিকী ‘শেখ রাসেল দিবস’ যথাযথ উৎসাহ-উদ্দীপনা ও মর্যাদার সাথে উদযাপন করেছে। এ উপলক্ষে দূতালয় প্রাঙ্গন বর্ণাঢ্য ব্যানার, পোস্টার ও রঙীন বেলুনে সুসজ্জিত করা হয়। বাংলাদেশ হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা,কর্মচারীগণ ও তাদের পরিবারবর্গ এতে অংশগ্রহণ করেন।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আলোচনা পর্ব শুরু হয়। দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়।
মান্যবর হাইকমিশনার মোঃ রুহুল আলম সিদ্দিকী তাঁর সমাপনী বক্তব্যে শেখ রাসেল এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, শেখ রাসেলের জন্মবার্ষিকী জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপনের সরকারের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সময়োচিত একটি উদ্যোগ। তিনি বলেন, পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে রাসেল ছিলেন সবার ছোটো ও অনেক আদরের। রাসেল নামটি শুনলেই যে ছবিটি আসে তা হলো হাস্যেজ্বল, প্রাণচ ল, দুরন্ত ও হাসি আনন্দে ভরপুর এক ছোট্ট শিশু। একারনেই, জন্মবার্ষিকীর এ বছরের প্রতিপাদ্য ’শেখ রাসেল, দীপ্তিময় নির্ভীক নির্মল দুর্জয়’ যথার্থ হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
হাইকমিশনার আরও বলেন, রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধুকে জীবনের দীর্ঘসময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে বিধায় শিশু রাসেল পিতার সান্নিধ্য ও আদর-যতœ থেকে বি ত ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালে শেখ রাসেল তাঁর মা, দুই বোন ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে ধানমন্ডির একটি বাড়িতে বন্দি জীবন কাটিয়েছেন। তিনি শোকাভিভূত হয়ে বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ইতিহাসের এক নির্মম, জঘন্য ও বিভীষিকাময় কালরাতে স্বাধীনতা বিরোধী, ষড়যন্ত্রকারী ও বিশ্বাসঘাতকদের হাতে বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের ১৮ জন সদস্য শহিদ হন। সেদিন ছোট্ট রাসেলও খুনিদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। কিন্তু কালের পরিক্রমায় শহিদ শেখ রাসেল আজ বিশ্বে অধিকার বি ত শিশুদের প্রতীক ও মানবিক সত্ত্বা হিসেবে বেঁচে আছে সকল মানুষের কাছে । দেশের শিশু-কিশোর ও তরুণ প্রজন্মের কাছে শেখ রাসেল এক ভালোবাসার নাম।
হাইকমিশনার বলেন, শৈশব থেকেই শিশুদের মধ্যে জ্ঞান-গরিমা, শিক্ষা-দীক্ষা, সততা, দেশপ্রেম ও নিষ্ঠাবোধ জাগ্রত করার মাধ্যমে তাদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তিনি উপস্থিত সকল পিতা-মাতার প্রতি তাদের সন্তানদের কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। আলোচনা শেষে শহিদ শেখ রাসেলের আত্মার মাগফেরাত, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুস¦াস্থ্য এবং বাংলাদেশের সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পবের্র শুরুতে হাইকমিশনার সকল শিশু-কিশোরদের নিয়ে শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এরপর শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহনে বিভিন্ন আনন্দ-ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতা শেষে শেখ রাসেলের জীবনীভিত্তিক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় এবং শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোরেরা কবিতা আবৃত্তি ও গান পরিবেশন করে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শেষে ‘শেখ রাসেল দিবস’ উপলক্ষে হাইকমিশনার শিশুদের সাথে নিয়ে শেখ রাসেলের প্রতিকৃতি আঁকা প্রমাণ সাইজের একটি কেক কাটেন। সর্বশেষ আনন্দ-ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের ও সকল শিশু-কিশোরদের মাঝে আকর্ষণীয় পুরস্কার বিতরন করা হয়।
অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত অতিথিদের মাঝে বাংলাদেশী খাবার পরিবেশন করা হয়।