আইন বিষয়ে পড়ালেখা করলাম কেনো?

আইন বিষয়ে পড়ালেখা করলাম কেনো?

লেখকঃ নাসির আহামেদ:
ছোটবেলার ইচ্ছা ছিলো ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবো। সেভাবেই চলছিলো সবকিছু, ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত বিজ্ঞান বিভাগের ঘানিও টেনেছিলাম। কিন্তু সামাজিক দূর্দশা দেখে মতামত পরিবর্তন জরুরী মনে করেছিলাম।
ডাক্তারের চিকিৎসায় রোগী মরে নয়তো বাঁচে। কিন্তু আইনের গ্যাঁড়াকলে পড়লে একজন মানুষ বাঁচেও না আবার মরেও না এমন অবস্থায় দিনাতিপাত করে। তাছাড়া এদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে আমার বেড়ে উঠা চোখে প্রায়শই নারী নির্যাতন সহ অগণিত অমানবিক চিত্র ভেসে উঠতো। বাবা এলাকার প্রতিনিধিত্ব করায় মাঝেমধ্যে গভীর রাতে দেখা মিলতো বিচারপ্রার্থী নিরীহ জনতার আর্তনাদ। “স্যার আমার মেয়েকে তারা অনেক মারছে, কষ্ট দিচ্ছে। আমি গরীব মানুষ তাই যৌতুকের টাকা দিতে পারিনি স্যার…”।
এসব করুন আর্তনাদের সাক্ষী হয়ে সেসময় মনে হতো যদি বিজ্ঞান না পড়ে আইনে পড়ে আইনজীবী হতে পারতাম তাহলে এসব নিরীহ অসহায় মানুষের আর্তনাদ থামিয়ে দিতে তাদের সাথে যেতাম সেসব অত্যাচারী মানুষরূপী অমানুষদের বাড়িতে। জানতে চাইতাম আমার বোন/মেয়েকে তোমরা পিটাচ্ছো কেনো? সমাধান দিয়ে আসতাম সুন্দর জীবনের। আমি বিশ্বাস করি মানুষ অন্যায় করে ভুল বুঝে বা লোভের কারণে। আমি জানিয়ে দিতাম লাল দালানের ভাত সারাজীবন ফ্রী খেতে দেয় সরকার।
তারপর আইনে পড়ার সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করলাম না। উকালতি পেশার রটানো বদনামের কারণে বাবা-মা ছাড়া অধিকাংশ মানুষের দ্বিমত পেয়েছি সর্বদা। অবশ্য এটা জানতাম এলাকার মানুষ আমাকে ভালবেসে দ্বিমত করতো কিন্তু বাবা-মা বাস্তবতা বুঝে সহযোগিতা করে গেছে। অনার্সের সময় আমার এক টিচার প্রথম ক্লাসে সবাইকে জানতে চেয়েছিলেন কেনো আইন পড়তে আগ্রহী? মাঝারি একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেছিলাম “যার নেই কোনো গতি সেই করে উকালতি”। স্যার আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলেছিলেন “জীবনের গতি হারিয়ে উকালতি পড়লে কেউ একথা বলবেনা। নিশ্চয় তুমি সবার চেয়ে ভিন্ন বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে আইন পড়তে আসছো”।
অতঃপর আইন পেশায় সংযুক্ত হয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ গত তিন বছরে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি এবং মানুষকে যথাসম্ভব পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। আইন পেশায় কাজ করতে পেরে এটাও জানতে পেরেছি আদালতে মিথ্যার আশ্রয় নিলে মামলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোনো মামলার বিশ্বাসযোগ্যতা নড়বড়ে করে দিতে অপরপক্ষের একটিমাত্র মিথ্যার আশ্রয় ধরিয়ে দিতে পারলেই যথেষ্ট। তাই মামলার আর্জি লেখার সময় ক্লায়েন্টের বর্ণিত অগণিত মন্তব্যের ভিতর সত্য-মিথ্যা ঝালিয়ে নিতে চেষ্টা করি বারংবার। আইনজীবী শুধুমাত্র আইনের প্রশ্ন আদালতে উপস্থাপন করে এবং মামলার বিচারকাজে সহযোগিতা করে। কিন্তু বিচার করার ক্ষমতা বিচারকের। কাজেই আইনজীবী ও বিচারালয় সম্পর্কে বিদ্রুপ মনোভাব পরিহার করা উচিত। কারণ, আপনাকে খুশি করে দুটো টাকা বেশি পেতে অসাধু কেউ আপনার সামনে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ছলনা করতে পারে। কিন্তু আমার দেখা অভিজ্ঞ আইনজীবীরা মিথ্যার আশ্রয় নেয় না। কারণ তারা জানে এক একটা মিথ্যা অযুহাত মামলার গ্রাউন্ড নষ্ট করার প্রধান কারণ।

লেখকঃ নাসির আহামেদ।
এলএল.বি অনার্স, এলএল.এম
লিগ্যাল এসোসিয়েট, চেম্বার অব জুরিস্ট
পুরানা পল্টন, ঢাকা।
Email: [email protected]

Share This Post